কামরুল হাসান:
আদালতের রায় ও ডিক্রিপ্রাপ্ত দখলীয় জমি নিয়ে জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা গ্রামের মৃত রহিজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে হাবিবুর রহমান ও তার দোসররা প্রতিপক্ষকে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ/মামলায় জড়ানোসহ বিভিন্ন অপপ্রচার ও অপতৎপরতার মাধ্যমে নানা হয়রানী করে আসছে। জামালপুর সদও থানার এক দারোগা পক্ষপাতমূলক কথা-বার্তাসহ হাই কোর্ট দেখালেন সেবা প্রত্যাশীকে।
জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা গ্রামের মৃত নহেজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে আব্দুস সামাদ মোল্লা তার দাদার দুই বোনের নিকট থেকে ১৬-০৩-১৯৭০ তারিখে ৭৩৯৫ নং দলিলমূলে ১ একর ৬০ শতাংশ এবং ২০-০১-১৯৭১ তারিখে ১৬৭০ নং দলিলমূলে ৬৫ শতাংশসহ একুনে ২ একর ২৫ শতাংশ জমি কিনে। কিš‘ সামাদ মোল্লার দাদা পজু মোল্লার ছোট ভাই (ছোট দাদা) রহিজ উদ্দিন মোল্লা কৌশলে ১৯৮২ সালের বিআরএস রেকর্ডে ওই কিনে নেয়া জমির সঠিক অংশ বা হিস্যা ধরে দেয় নাই। এ ঘটনা প্রকাশ পেলে আব্দুস সামাদ মোল্লা ও তার ওয়ারিশগণ ওই জমির সঠিক হিস্যার জোরালো দাবী তুলে। এ কারনে রহিজ মোল্লার দুই ছেলে তৈয়ব আলী ও হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ২০০৬ সালে ২২জনকে বিবাদী করে সদর সিনিয়র জর্জ আদালতে ৫৪/০৬ নং মামলা দায়ের করে। এ মামলাটির মোকাবেলা করে বিবাদী পক্ষের আব্দুস সামাদ মোল্লা । অবশ্য সাক্ষ্য- প্রমানের অভাব ও গরহাজিরার কারনে ০১-১২-২০১৯ তারিখে ওই মামলাটি খারিজ করে দেয় বিজ্ঞ আদালত। ইতোমধ্যে ২০১৫ সালে বিআরএস রেকর্ড সংশোধনের জন্য আব্দুস সামাদ মোল্লার ওয়ারিশগণ (১ক-১ছ) বাদী হয়ে ২৫ জনকে বিবাদী করে এলএসটি আদালতে ৩৫৫৬/১৫ নং মামলা দায়ের করে। বিগত ২৮-০৮-২০২৩ তারিখে বিয়ারা মৌজার কিনে নেয়া ২ একর ২৫ শতাংশ জমি থেকে হিস্যামতে ৬৬.৫ (সাড়ে ছেষট্টি) শতাংশ জমির মালিকানার বিষয়ে বাদী পক্ষে রায় হয়। অতঃপর ৩১-০৮-২০২৩ তারিখে ওই রায়ের ডিক্রিজারি হয়। অতঃপর আব্দুস সামাদ মোল্লার ওয়ারিশগণ আদালতের রায় ও ডিক্রিপ্রাপ্ত হয়ে তাদের জমি চাষাবাদের জন্য চলতি বছরের ১ জানুয়ারী পূর্ণ দখল নেয়। এতে হাবিবুর রহমান গং প্রতিপক্ষের দখলীয় ওই জমি জবর দখল নিতে ওঠে-পড়ে লাগে। এ বছরেরই ৩ জানুয়ারী হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আব্দুস সামাদ মোল্লার ওয়ারিশগণের বিরুদ্ধে এডিএম আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় মামলা করে। কিন্তু মামলায় উল্লেখিত জমি অন্যের খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় ১৫ জানুয়ারীতে পুনঃরায় ১৫/২৪ নং মামলা দায়ের করে। এ মামলাতেও বিবাদী পক্ষের ১২২ নং দাগের একক মালিকানাধীন জমিতে তার হিস্যা ধরে। পক্ষান্তরে ১২১ ও ১৫৩ নং দাগে তার বৈধ মালিকানার কোন হিস্যাই ধরেনি। এছাড়া বিবাদী পক্ষের ১২১ নং দাগের ৫ (পাঁচ) শতাংশ জমির সীমানা খুঁটি তুলে ও আল ভেঙ্গে ফেলে তার লোকজন। ইতোপূর্বে এ সকল কর্মকান্ডের জন্য হাবিবুর রহমান গং-এর বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুস সামাদ মোল্লার ওয়ারিশগণের পক্ষে আক্তারুজ্জামান। এ প্রেক্ষিতে হাবিবুর রহমান গং আর কোনো সময় আব্দুস সামাদ মোল্লার ওয়ারিশগণের সাথে এমন কান্ড ঘটাবে না ঘটালে দায়ী থাকবে মর্মে মুচলেকাও দিয়েছে। অথচ তারা অহরহই এমন কান্ড ঘটিয়ে চলছে। ওদিকে দখলীয় জমির বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন দাখিলে আদালতের নির্দেশ পান শাহবাজপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মজিবর রহমান। তিনি ২৪ জানুয়ারী সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। ১ মার্চ বাদীর বোনের নাতিনরা বিবাদী পক্ষের পুরুষদের অনুপ¯ি’তিতে বাড়ীতে ঢুকে মহিলাদের গালাগালিসহ নানা হুমকি দিয়ে যায়। আদালতের ধার্য্য দিন ২০ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা অফিসে বসে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তাই বাদী ওই প্রতিবেদনের না রাজি দেয়। পরে আদালত পুনঃপ্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় তাকে। আদালতের পরের ধার্য্য দিনে দাখিলকৃত পুনঃপ্রতিবেদন পর্যালোচনান্তেবিজ্ঞ আদালত ওই মামলাটিও খারিজ করে দেয়। এমতাবস্থায় হাবিবুর রহমান গং প্রতিপক্ষের ভোগদখলীয় জমিতে রোপন করা বিভিন্ন ফসল ও গাছ-পালার ক্ষতিসাধনসহ নানা প্রকার অপতৎপরতা ও অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ ডিসেম্বর আব্দুস সামাদ মোল্লার ছেলে মঞ্জুরুল মোল্লা তার নিজ দখলীয় জমির গাছের ডাল-পালা ছাটে। এতে হাবিবুরের বড় ভাই মৃত তৈয়ব আলীর মেয়ে তাহমিনা বেগম ওরফে পারুল ৮ ডিসেম্বর সদর থানায় ডাল কাটার বিষয়ে মঞ্জু গংয়ের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অভিযোগ দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর থানার এস আই খায়রুজ্জামান ফাহিম ওই দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। মঞ্জু মোল্লা তখন আদালতের রায় ও ডিক্রিপ্রাপ্ত নিজ দখলীয় জমির গাছের ডাল-পালা ছাটার কথা জানান। পরে ওই দারোগার নিকট অভিযোগের কপি চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। বরং তিনি মঞ্জু মোল্লাকে থানায় আদালতের রায় ও ডিক্রিসহ কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেন। তাই মঞ্জু মোল্লা ১০ ডিসেম্বর বিকেলে ওই দারোগার নিকট আদালতের রায় ও ডিক্রিসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেন। সে দিনও মঞ্জু মোল্লার ছোট ভাই কামরুল হাসান অভিযোগের কপি চান। দারোগা ব্যস্ত বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কামরুল হাসান ১৮ ডিসেম্বর যোগাযোগ করলে দারোগা খুবই ব্যস্ত তাই তিনি ২ দিন পরে যোগাযোগ করতে বলেন। ২১ ডিসেম্বর সকালে যোগাযোগ করলে ফের পরের দিন দুপুরে জানাতে চান। ২২ ডিসেম্বর দুপুরে দারোগা নিজেই ফোন দিয়ে পরের দিন সকালে ফোন দিতে বলেন। ২৩ ডিসেম্বও দুপুরে ২ বার ফোন দিলেও ওই দারোগা রিসিভ করেন নি। বাধ্য হয়েই সেবা প্রত্যাশী কামরুল হাসান ৫ জানুয়ারী সকালে ফোন দিলে তিনি রাত ৮টার পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কথামত রাতে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগের কপি দেয়া যাবে না। আর আপনারা তো ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট থেকে রায় ও ডিক্রি নিয়েছেন। হাই কোর্ট থেকে তো আর রায় নেন নি। তা ছাড়া অপর পক্ষ আপিল করায় এখন আর আপনাদের রায়ের কার্যকারিতা নেই।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীগণ অর্থাৎ আব্দুস সামাদ মোল্লার ওয়ারিশগণ প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সু-দৃষ্টি কামনা করছে।