কামরুল হাসান:
জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা গ্রামের মৃত রহিজ উদ্দিন মোল্লার ছোট ছেলে মাওলানা হাবিবুর রহমান। তিনি নানা কারনে এখন সত্য ছেড়ে মিথ্যাকে আকড়ে ধরেছেন। আর অতি লোভের জন্য অভাবে পড়ে বর্তমানে স্বভাবও নষ্ট করেছেন।
জানা যায়, তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অর্থাৎ আশির দশকের প্রথমাংশে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেন। উল্লেখ্য, তখনকার সময়ের কামিল পাশের মান বর্তমানের আলিম পাশ। তাই কামিল পাশ করায় তিনি নামের আগে মাওলানা যোগ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি কৈডোলা গ্রামের এক ধার্মিক মহিলাকে বিয়ে করেন। বাবার যতটুকুন জমি ছিল তা দুই ভাই বন্টন করে নিয়ে মোটামুটি বেশ ভালই চলছিলেন। কিন্তু মাওলানার ওই ধার্মিক স্ত্রী এতটাই ধর্ম পরায়ন ও পরহেজগার যে, তার কথা-বার্তা, আচার-আচরন ও চলা-ফেরা ধারনার সম্পূর্ণ বিপরীত। তাকে সামলাতে না পেরে অবশেষে ‘যদি তোর ডাক শোনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে’ নীতি অবলম্বন করেন ওই মাওলানা। একদিন তার স্ত্রী মাহফুজা আর তার ভাবী মাহমুদার মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়। তখন তার স্ত্রীকে না সামলিয়ে বরং ভাবীকেই উপর্যুপরি মারপিট করে আহত করেন। যার কু-প্রভাব এখনো রয়েছে তার ভাবীর শরীরে। আবার ওই মাওলানা আরেক দিন তার ভাতিজি বুলিকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন। এক পর্যায়ে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দেন। ফলে তার ভাই বাড়ির পিছনে নতুন বাড়ী করে বসবাস শুরু করেন। যা এলাকার সকলেরই জানা। অতঃপর তিনি এলাকায় একটি এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। সে সুবাদে তিনি ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু মাদ্রাসাটি সরকারী তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারনে এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আত্মীয়-স¦জন, বন্ধু-বান্ধব ও হিতাকাঙ্খীদের সহযোগিতায় সদর উপজেলার কৈডোলা হক দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকুরী নেন। বেশ ভালই দিন কেটে যাচ্ছিল তার। সংসার চালিয়েও কিছু সঞ্চয় করে জমিও কিনতে লাগলেন। এরই মধ্যে তাকে ‘বাবা’-য় পেয়ে বসলো। মানে জি¦নের বাদশা নামক বাবা। অবশ্য তার স্ত্রীই ওই বাবার খোঁজ পেয়েছেন আগে। তিনি অনেকটা লোভী হয়ে গেলেন। তাই গোপনে গোপনে অনেক টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় সেই বাবায়। শেষ নাগাদ জমি বিক্রি করেও কুল-কিনারা না পেয়ে চড়া সুদে ঋণ করেও অনেক টাকা দিতে হয়েছে সেই বাবাকে। এক পর্যায়ে তার প্রতিষ্ঠানের তিনিই প্রধান তাই ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন। তাই তিনি জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এক পদের বিপরীতে বেশ কয়েক চাকরী প্রার্থীর নিকট থেকে সাদা চেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নেন। তাদের চাকরী দিতে না পারায় অবশেষে মামলায় জড়ান। জেল-হাজতও খাটেন তিনি। এ কারনে একটি ইসলামী সংগঠন থেকে তার নাম-পদবী বাতিল হয়ে যায়। স্থানীয় একটি বৃহৎ ঈদের জামাত পড়ানো থেকেও নিষেধ করা হয় তাকে। শুধু রয়ে যায় মহল্লার মসজিদের জুম্মার নামাজের ইমামতি। তাও সম্ভব হয়েছে ওই মসজিদ কমিটির সভাপতির জন্য। কারন-ওই সভাপতিও নাকি কয়েক বছর আগে মসজিদের নামে সরকারী বরাদ্দকৃত টিআর আত্মসাৎ করেছিলেন। ওই মাওলানা এখন চাকরীর সুপারিশ মানে দালালীও করেন। তার মসজিদের মোয়াজ্জিন জুলহাসের পঞ্চম শ্রেণী পাশ ছেলেকেও নাকি চাকরী নিয়ে দিবে বলে বেশ কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। সেই সাথে ওই মোয়াজ্জিনের ছোট ভাই অন্য এক মসজিদের মোয়াজ্জিন আফজাল। তার দাখিল পাশ ছেলেকেও নাকি চাকরী নিয়ে দিবে বলে সেখান থেকেও কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এলাকায় প্রচার আছে-এক স্থানে কয়েক শতক জমি কিনেন ওই মাওলানা। ওই জমিতে পুরানো একটি কবরস্থান ছিল। কবরস্থান ছাড়াই বিক্রিত জমি বুঝিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। অথচ জমিটুকু বিক্রির সময় এলাকাবাসীর অনুরোধ না শোনে কবরস্থানসহ বিক্রি করে দেন। আর জমি কিনে নেয়া ব্যক্তি সেখানে পুকুর খুঁড়েন। তখন মাটির নিচে থেকে অনেক হাড় বের হয়। তাই জমির পূর্বের মালিক নিঃপুত্রক ও বিধবা মহিলা অনেক কান্না কাটি করে মাওলানাকে নানা অভিশাপ দিয়েছিলেন। আর এ জন্যই নাকি তার সব জমি-জমা নিঃশেষ হয়েছে বলে এলাকায় শোনা যায়। ওই মাওলানার মধ্যে থাকা শরিকদের ওয়ারিশের জমি (ক্রয়কৃত যা আদালতের রায় ও ডিক্রিপ্রাপ্ত) শরিকরা দখলে নেন। ওই জমি নিয়েও নানা মিথ্যা অভিযোগসহ অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কয়েক বছর আগে তিনি মাদ্রাসা থেকে সুপার হিসেবে অবসর নেন। আগের সময়কার মাওলানা হাবিবুর রহমান আর বর্তমানের হাবিবুর রহমানের মধ্যে আচার-আচরনে বিস্তর ফারাক। সত্য পথ ছেড়ে এখন মিথ্যাকেই আকড়ে ধরেছেন। তিনি লোভের কারনে অভাবে পড়েছেন। আর অভাবে পড়ে স্বভাবও নষ্ট করে ফেলেছেন। তাই অনুশোচনা আর আক্ষেপে বলতে হয়- কী ছিলে তুমি!