কামরুল হাসান:
আজ ১২ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে জামালপুর
জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। অবশ্য এই দিনটির জন্য দীর্ঘ দিন
অপেক্ষা করতে হয়েছে। করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ স্বীকারও। এর সাথে বিনিময়ে
দিতে হয়েছে অনেক রক্ত আর জীবন । অবশেষে অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়ে পাকিস্তান
হানাদার বাহিনীকে হঠিয়ে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করে বীর বাঙালি। মূলতঃ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে পাকিস্তান বাহিনীর কাপুরুষিত আক্রমনের পর
থেকেই শুরু হয় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। দীর্ঘ নয় মাসাধিককাল স্বসস্ত্র
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রকৃত বিজয়ের আস্বাদ পায় বাঙালি জাতি। তবে মুক্তি
সংগ্রামের শুরুর দিকে অর্থাৎ এপ্রিলে উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের পারপাড়ার
ঘোষ পল্লীতে, জুলাইয়ে পৌরসভার বাউসি পপুলার রেলব্রীজ পাড় এলাকা, আগস্টে
সাতপোয়ার আরামনগর কামিল মাদরাসা, সেপ্টেম্বরে আওনা ইউনিয়নের
জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে, অক্টোবরে গোয়ালবাথান ও কাশিনাথপুরে এবং নভেম্বরের শেষ
দিক থেকে মাঝ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিংনা ইউনিয়নের বারইপটল, ফুলদহের পাড়,
মেদুর, মেইয়া ও বাঘআছড়ার খন্ড-খন্ড রক্তক্ষয়ী স্বসস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধই বিজয় এনে
দিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বিশেষ করে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দশকে
অর্থাৎ ৯ তারিখ রাত থেকে ১২ তারিখের দুপুরের আগ পর্যন্ত এই আড়াই দিনের
পিংনা ইউনিয়নের বারইপটল, ফুলদহের পাড়, মেদুর, মেইয়া ও বাঘআছড়ার রক্তক্ষয়ী
স্বসস্ত্র সম্মুখ যুদ্ধই হনাদার বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছে। লতীফ
কোম্পানী, রশিদ কোম্পানী, লোদা কোম্পানী ও ফজলু কোম্পানীর নেতৃত্বে
হানাদার মুক্ততে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ অবদান রয়েছে। মুক্তি সংগ্রামের এ
ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং শিশু,নারী ও পুরুষসহ
অর্ধশতাধিক সাধারন মানুষও শহীদ হয়। এরফলে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর
পূর্বাহ্নেই সরিষাবাড়ীবাসীকে বিজয়ালোর মুখ দেখিয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।