কামরুল হাসান
‘আমি এক পাগলা বাউল, গান গেয়ে যাই এক তারাতে/এ দেশের মটর শুটি
সরষে ফুলের গন্ধে মেতে’ দেশাত্ব বোধক ঘরনার এ গানটিতে আবহমান
গ্রাম বাংলার দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে লোক
বাদ্যযন্ত্র একতারা। আবার একতারা আর বাউল একে অন্যের পরিপূরকও বটে।
প্রাচীন এ বাদ্যযন্ত্রটিতে একটি মাত্র তার থাকে বলে একে একতারা বলা হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজ মেলাগুলোতে একতারা পাওয়া যায়। অনেকেই তা
শখের বশে কিনে বাড়ি নিয়ে যায়। কেউ আবার শুধুমাত্র বাড়িতে সাজিয়ে
রাখার জন্যই কিনে নেয়। আবার অনেকে এটিকে বাজানোর জন্যই কিনে।
বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও এর আশেপাশের এলাকায় এর প্রচলন বেশি।
বিশিষ্ট জনদের মতে- তিনশত ষাট আউলিয়ার দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এ
কারণে এদেশে অলি, আউলিয়া, পীর, দরবেশ ও সূফি-সাধকদের আনাগুনাও
বেশি। সে অনুযায়ী বাউল-সাধকদেরও বেশি লক্ষ্য করা যায়। আর তাদের হাতে
একতারা থাকাটা অস্বাভাবিকের কিছু নয়। তারা একতারাতে বিভিন্ন মরমী
গানের সুর তুলেন।
এ বাদ্যযন্ত্রটির প্রচলন ঠিক কখন থেকে শুরু সে বিষয়ে কোন নিশ্চিত
হিসেব বা ধারনা পাওয়া যায় নি। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাউল-
সাধকদের হাতেই বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশীয় এ যন্ত্রটি তৈরীতে লাউ,
নারিকেল ও পিতলের তৈরী খোলাতে চামড়া বা এ জাতীয় পর্দার ছাউনিসহ
বাঁশ, কাঠ, তারের সমন্বয়ে তৈরি হয় একতারা। কতকটার এক মুখ উন্মুক্ত
রাখতে হয়। একতারায় খোলা মুখের ব্যাস সাধারণত ৬-৭ ইঞ্চি হয়। এর হাতল বা
দন্ড ২.৫-৩ ফুট লম্বা হয়। বিশেষ কায়দায় এ হাতল বা দন্ড খোলাতে বাঁধা
থাকে। এ খোলার এক প্রান্তে সরু সুতা, লোহা, ইসপাত বা পিতলের তার
বেঁধে হাতল বা দন্ডের মাথায় নিয়ে আঁটকানো থাকে। প্রয়োজনে এ তার
ঢিল বা টান করা যায়। এ তারেই হাতের আঙ্গুলের স্পর্শের সাহায্যে সুর তুলে
বাউলরা মনের সুখে গান গায়।
(লেখক: সাংবাদিক, ফিচার ও কলাম লেখক)।
কামরুল হাসান