সেলিম মাহবুব,সুনামগঞ্জ:
বাজার মনিটরিং না থাকায় ছাতকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নিয়ন্ত্রনহীন কাঁচা বাজার। দুর্গা পূজা চলাকালীন সময়ে সবজী, ফলমুল সহ নিত্যপণ্যের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তায় সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভে প্রতিটি পণ্যের মুল্য লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ভোক্তারা মনে করছেন। বাজার মনিটরিং না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে কাঁচা ব্যবসায়ীরাও। পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৮-১০ দিন আগে এবং পূজা চলাকালীন সময়ের মধ্যে এসব নিত্যপণ্যের মুল্য প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে।
যা এখনো অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যে। বাজারে শীতকালীন আগাম শাক-সবজীরে উঠলেও দাম সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। নিত্যপণ্যের নিয়ন্ত্রনহীন মুল্যে এখন নাভীশ্বাস উঠছে ক্রেতা সাধারনের। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কাঁচা বাজার, মাছ, মাংস বাজার, ফলমুল ও গ্রোসারী পণ্য সহ সকল পণ্যই বিক্রি হচ্ছে নিয়ন্ত্রনহীন মূল্যে। নিময়-নীতির তোয়াক্কা না করে যার-যার মতো মূল্য নির্ধারন করে শাক-সবজী বিক্রি করছেন কাঁচা ব্যবসায়ীরা। জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অনেকটা অসহায়ত্বের মতোই পকেট উজাড় করে নিত্যপণ্য কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। ছাতক শহর সহ আশপাশের কয়েকটি বাজার ঘুরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে দামের বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। ভিন্ন ভিন্ন বাজারে বা দোকানে নিত্যপণ্যের মূল্যও ভিন্ন-ভিন্ন। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় মূল্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাজারের ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব্য। কোনো-কোনো সবজী প্রতি কেজির মুল্য ২শ’ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে সবজীর দাম বাড়তে থাকলে সাধারন মানুষের জীবন-জীবিকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। বাজারে আসা বিভিন্ন ক্রেতাদের সাথে আলাপচারিতায় তারা জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুলের মুল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ম আয়ের মানুষ। এমন কি মধ্যবিত্তরাও বাজারে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিমাসে অন্তত দু’বার করে সরকারীভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবী জানান তারা। কাচাঁ বাজার ঘুরে দেখা যায়, টমেটো প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা, মুখী ৮০ টাকা, বেগুন ৯০ টাকা, লুবি ৯০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০০-৪৫০ টাকা, নতুন মুলা পাতা সহ ৭০ টাকা, পুরাতন মুলা ৬০ টাকা, ধনে পাতা প্রতি গ্রাম ৪০ টাকা, ঢেঁরশ ৭০ টাকা, বাধা কপি ৭০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, ফুলকপি ১২০ টাকা, কাকরুল ৮০ টাকা, পেপে ৪০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, সিম ৩০০ টাকা, মাঝারী সাইজের কলার মুচা ৫০-৬০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, মিষ্টি লাউ প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে একটি মাঝারি সাইজের মিষ্টি লাউ ২৫০-৩০০ টাকা, বাংলা লাউ ১০০-১২০ টাকা, সাধারন সাইজের একটি চাল কুমড়া ৮০-৯০ টাকা, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৭০-৮০ টাকা, আলু ৫৫-৬০ টাকা, ছোট আলু ৭০ টাকা, ঝিংগা ৬০ টাকা, ছিছিন্দা ৬০ টাকা, শষা ৫০ টাকা, ৪-৫ টি করে বাধা আটি ডাটা ৬০ টাকা, মাংসের বাজারে সাদা পোল্ট্রি প্রতি কেজি ২২০ টাকা, লাল মোরগ প্রতিপিচ ৬৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ১৩০০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ টাকা, কোয়েল পাখি প্রতি পিচ ৪৫ টাকা, মাছ বাজারে ফার্মের কৈ মাছ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, রুই ছোট প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, মাঝারি ৩৫০ টাকা বড় ৮০০ টাকা, ফুলমুল মাল্টা প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, আপেল ২৮০-৩০০ টাকা, আঙ্গুর সাদা প্রতি কেজি ৫৩০ টাকা, কালো আঙ্গুর ৪০০ টাকা, পেয়ারা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, কলা প্রতি কুড়ি ১৫০-১৮০ টাকা, গ্রোসারী পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০- ১৪০টাকা, রসুন ২০০-২২০ টাকা, শুকনো মরিচ ৪০০ টাকা, হলুদ গুড়ো ৫৪০ টাকা, জিরা ৮০০-১০০০ টাকা, আদা ২৮০-৩০০ টাকা, সোয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৫-১৮০ টাকা, সরিষার তেল ৪০০ টাকা, মুশুরী ডাল ১১০-১২০ টাকা, চাল সিদ্ধ মিনিকেট প্রতিকেজি ৭০ টাকা, মোটা ৬৫ টাকা, আতপ নতুন ৫০ টাকা, পুরাতন মালা ৬৫ টাকা, কালিজিরা, নাজির সাইল, চিনি গুরা ১২০-১৩০ টাকা। গ্রোসারী পণ্যের মূল্য কিছুটা স্থিতিশীল হলেও মাছ এবং সবজীর বাজারে বইছে অস্থিরতা। কোনো রকম কারন ছাড়াই প্রতিটি সবজীর দাম দুই থেকে তিন গুন বাড়ানো হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মুল্যের সাথে সাধারণ মানুষের আয়ের কোন মিল নেই। বাজারে সবজী কিনতে আসা সজল পাল জানান, নিন্ম আয়ের মানুষ শাক-সবজী কিনে খাওয়া সামর্থ হারিয়ে ফেলছে। অস্থির বাজার থেকে সবজী কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। মাছ কিনলে সবজী কেনার সামর্থ থাকে না, আর সবজী কিনলে মাছ কেনা হয় না। ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতা আবুল কাদির জানান, বাজার মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো দামে পণ্য বিক্রি করছে। ক্রেতারা অনেকটা অসহায় হয়েই বাড়তি দামে কিনে নিচ্ছে নিত্যপণ্য। বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তারা খুচরা ব্যবসায়ী। কেজিতে ৫-১০ টাকা লাভে বিক্রি করে থাকেন বিভিন্ন সবজী। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের কোন হাত নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট গোলাম মোস্তাফা মুন্না জানান, বাজার মুল্য নিয়ন্ত্রনে মটিরিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে প্রসাশন থেকে। ##