মোঃ রিমন চৌধুরী নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণীরা কপালে দিয়েছে টিপ। সেই সাথে ঠোঁটে লিপস্টিক, চুলের বেনিতে শোভা পাচ্ছে ফুলের মালা। তাদের সাথে পিছিয়ে নেই তরুণরাও। সেজে-গুজে পুরো মাঠ জুড়ে তরুণ-তরুণীরা খুঁজছেন নিজের জীবন সঙ্গীনীকে। আর এরই মধ্যে যদি জীবন সঙ্গীনী পছন্দ হয়ে যায় তাহলে পরিবারিক ভাবে ধুমধামে হয়
বিয়ে। এমনকি বিয়ের জন্য যাবতীয় জিনিসপত্রের পসরাও সাজিয়ে রেখেছে বিক্রেতারা। এমনই ব্যতিক্রমধর্মী মেলার দেখা মিলল দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায়। প্রায় দুই শত বছর ধরে উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আদিবাসীদের এই মিলন মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যা এক সময় বৌ মেলা নামে পরিচিত ছিল।
শারদীয় দুর্গাপূজার একদিন পরে উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মিলন মেলা হওয়ার কথা থাকলেও সোমবার হাটের দিন থাকায় মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) উৎসবে মেতে উঠে সকল বয়সের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মেলা। মেলায় যোগ দিতে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রাজশাহী ও নওগাঁও জেলার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র- নৃ-গোষ্ঠীর বউ, শাশুড়ি, ননদ, জা ও ঝিরা একত্রিত হন।
সকাল থেকেই নারী-পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ আসতে শুরু করে মেলায়।
মেলায় বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎসব মুখর পরিবেশে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মিলন মেলা।
কাহারোল উপজেলার কামোর গ্রাম থেকে নিজের মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে আসা রমেশ চন্দ্র রায় বলেন, এই মেলার বিষয়ে অনেকদিন ধরে শুনছি। কিন্তু কোন দিন আসা হয়নি। এবার পরিবারসহ আসছি। মেয়েকেও নিয়ে আসছি। যদি এখানে ছেলে পছন্দ হয় তাহলে কথা বলব। মেলাটা দেখে খুব ভালো লাগলো।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা ১৬বছর বয়সী তরুণী মনিকা হাসদা বলেন, ‘আমরা পুরো পরিবার মেলায় আসছি। মেলার বিষয়ে অনেকের মুখে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু আজকে বাস্তবে দেখা হলো। খুব ভালো লাগলো।
দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের পারগাঁও গ্রাম থেকে ঘুরতে আসা তরুণী ভাদুরি টুডু বলেন, ‘এখানে অনেক রকমের মানুষ আসে। অনেক বছর ধরে এখানে আসা হয়। এখানে আসলে অনেক আত্মীয়-স্বজনেরও দেখা পাওয়া যায়। তাই এখানে প্রতি বছর আসি।
নিজপাড়া ও মোহনপুর ইউনিয়নের আয়োজনে এবং গোলাপগঞ্জ দূর্গাপুজা উদযাপন কমিটির সার্বিক তত্তাবধানে মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. মনজুরুল মঞ্জু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপি সভাপতি মো. আমিরুল বাহার, মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান জনাব মো. শাহীনুর ইসলাম শাহীন, নিজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান আনিস, বীরগঞ্জ উপজেলা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শীতল মার্ডি।
এসময় বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক কমলা কান্ত হাসদা বলেন, এই মেলা প্রায় ২০০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমরা দাদা-দাদি, নানা-নানির কাছ থেকে এই মেলার বিষয়ে শুনে আসছি। এটি আগে মিলন মেলা নামে পরিচিত ছিল না। ২০ বছর আগে এই মেলার নাম বউ মেলা থেকে মিলন মেলা করা হয়। আমাদের আদিবাসী ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা এই মেলার অপেক্ষায় থাকে। বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ভারত থেকেও অনেকে মেলায় আসে। এক প্রকার মিলন মেলায় পরিণত হয়। তাই মেলাটির নাম মিলন মেলা হিসেবে রাখা হয়েছে। মেলায় তরুণ-তরুণীরা তাদের জীবন সঙ্গীনী পছন্দ করে। পরে তারা পারিবারিকভাবে বিয়ে করে।
এই মেলায় বাহারি সব কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র খেলনা, গৃহস্তালিকাজে ব্যবহৃত দা কুড়াল,হাড়ি পাতিল,জিলাপি, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা।