কামরুল হাসান:
সাংবাদিকতা বড়ই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং পেশা। এ পেশায় আছে পদে পদে হয়রানি, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা আর অপমান-অপদস্ত। কাঙ্খিত বিষয় উপস্থাপনের মাধ্যমেই একজন সাংবাদিক প্রকৃত সুখ খুঁজে পায়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ওই মাসের প্রথম দিকে স্থানীয় একটি দৈনিকে “সামনে অশনি সংকেত/কাÐারি হুঁশিয়ার/ত্রি-ধারায় বিভক্ত সরিষাবাড়ীর আওয়ামী রাজনীতি” শিরোনামের খবরটি প্রকাশিত হয়। এ সংবাদটির মূল কথা ছিল- আওয়ামীলীগ মনোনীত এমপি ডা. মুরাদ হাসান দলের বৃহৎ অংশের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কতিপয় নেতা-কর্মী নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করে সকল কর্মকাÐ চালান। এতে দলের প্রবীণ, ত্যাগী ও অন্যান্য সক্রিয় নেতারা নাখোশ হন। ফলে সরিষাবাড়ীর আওয়ামী রাজনীতিতে ফাটল ধরে। প্রকাশ্যে শুরু হয় তিনটি ধারার নেতৃত্ব। একটি ধারার নেতৃত্ব দেন তখনকার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালেক এমপি, আরেকটির নেতৃত্ব দেন সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন বাদশা। এতে করে সরিষাবাড়ীর আওয়ামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ যে ভালো নয় তার প্রতিই ইঙ্গিত ছিল। অবশ্য পরবর্তীতে এ তিনটি ধারা ছাড়াও সদ্য বিদায়ী এমপি প্রিন্সিপাল আব্দুর রশীদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের আরও দুটি পৃথক ধারার উদ্ভব ঘটে। অর্থাৎ ত্রি-ধারা থেকে পঞ্চ-ধারায় প্রবাহিত হয় সরিষাবাড়ীর আওয়ামী রাজনৈতিক নদী। ওই সংবাদটি সরিষাবাড়ীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নাখোশ হন এমপি, এমপি’র অনুসারী, পুলিশ ও সাংবাদিকরা। উল্লেখ্য, বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ওসি জাকির হোসেন ও নারী সংক্রান্ত বিষয়ে ওসি আনোয়ারুল ইসলাম স্ট্যান্ড রিলিজ হন। এ কারণে পুলিশ সদস্যরা নাখোশ হয়। সহযোগিতা না করায় ভ‚য়া চক্ষু বিশেষজ্ঞ বিপ্লব কুমার পোদ্দারকে ইউএনও কামরুল হাসান এর ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা হয় ও এমপি মুরাদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধের উপক্রম হওয়ায় সাংবাদিকরাও নাখোশ হন। পরে যা হবার তাই হলো। হঠাৎ একদিন সরিষাবাড়ীর শিমলা আমতলা থেকে সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ মোটরসাইকেলসহ থানায় নিয়ে যায়। পরে কারণ হিসেবে জানা যায়, ভ‚য়া সাংবাদিকতার জন্য থানায় নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরিষাবাড়ী কর্মরত ১০ সাংবাদিক বন্ধু ১০ টি জিডি/অভিযোগ নিয়ে হাজির হন। তখন ওসি একেএম কামরুল আহসান ও ¯িœগ্ধ নামের একজন সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ) এর মুখোমুখি হতে হয়। ভ‚য়া সাংবাদিকতার বিষয়ে তারা সবাই ব্যাখ্যা দেন যে, সাংবাদিকতা করতে হলে কোন স্বীকৃত বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে ডিগ্রি নিতে হয়। ওই ডিগ্রি না নিয়েই সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেয়া ও এ পেশায় কাজ করা যায় না। এর আগে সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ) ¯িœগ্ধ এর সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, তার বাবা দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি ও ওই জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি। এ বিষয়টা কাজে লাগানোর মোক্ষম সময় এলো। তাই ওনাকে প্রশ্ন করা হলো- আপনার বাবা একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তিনি সাংবাদিকতা বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন কি না জানি না? তবে যে সাংবাদিক বন্ধুরা আজকে এখানে উপস্থিত তারাই কি সাংবাদিকতা বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন? অবশ্য তিনি এর সদুত্তর না দিয়ে ওসির কক্ষ ত্যাগ করেন। পরে ওসি একেএম কামরুল আহসান প্রশ্ন করলেন- নিউজটা করলেন তো করলেনই তবে নিজের নাম দিলেন কেন? উত্তরে সাফ জানানো হলো- নিউজটা কে করেছে তার প্রমাণস্বরূপ। পরের প্রশ্ন নিউজের সব লেখাই ঠিক তবে একটা লাইন লিখেই বিপদে পড়েছেন। কোন লাইন জানতে চাওয়ায় বললেন- “এমপি ডা. মুরাদ হাসান দলের বৃহৎ অংশের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কতিপয় নেতা-কর্মী নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করে সকল কর্মকাÐ চালান।” এর প্রতিত্তরে স্পষ্ট জবাব- এখানে বিন্দু পরিমাণ মিথ্যা লিখা হয়েছে কি? ওসি বললেন- মিথ্যা লেখেন নি ঠিক। তবে তিনি তো একজন এমপি। তাই তার বিরুদ্ধে না লেখাই ভালো ছিল। সবশেষে ওসি প্রশ্ন করলেন- আপনেও একজন সাংবাদিক অন্যরাও সাংবাদিক।