গোলাম মোস্তফা নিজস্ব প্রতিবেদক
উপদেষ্টাদের নীরবতায় মাজারে হামলাকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব ও কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের আহ্বায়ক এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ভয়াবহ আলামত। অথচ বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা এর বিরুদ্ধে কঠোর ও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করে বরং নীরবতা পালন করছে। ফলে দেশবিরোধী শক্তির দোষররা মাজার ও দরগায় হামলায় উৎসাহিত হচ্ছে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের আহ্বায়ক কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করলেও এই সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী শক্তিকে দমন করতে বা নিয়ন্ত্রন করতে সরকারের কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা জনগন পরিলক্ষিত করছে না। অপরাধীরাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। বরং সরকার কোন কোন উপদেষ্টা পতিত স্বৈারাচারের দোষর, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ফতোয়া প্রদানকারী, শাসক যে-ই হোক তার আনুগত্য করা ফরজ, শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা করা, আন্দোলন করা, হরতাল অবরোধ করাকে হারাম বলে ফতোয়া দেয়া সুবিধা ভোগী গোষ্টির সাথে মাখামাখি করছে।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বিভিন্ন মাজারে হামলা হচ্ছে, এটি একটি ভয়াবহতার আলামত। এমন দুঃসাহস কিভাবে পায়, কি মনে করছে তারা। যে যেই অনুসারী হোক কাউকে বাধা দেয়া সংবিধান ও বিজয়ের চেতনা পরিপন্থি। বিভিন্ন মত পথ ধারণ করাই হলো একটি সভ্য দেশের চরিত্র। আপনারা মওদুদীবাদ হন আর ওহাবী হন আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু মওদুদীবাদ আর ওহাবীবাদ যদি কারো উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চান, আপনারা সেখানে মনে করবেন না যে মানুষ এটা গ্রহন করবেনা।
তিনি আরো বলেন, সিলেটে শাহ পরানের ওরশে হামলা সরকারের নিরবতার প্রতিফলন। দেশে মব ট্রায়ালের মাধ্যমে সাধারণ জনতাকে উত্তেজিত করে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে চলেছে। ভিন্নমতকে এভাবে হামলা, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে প্রতিহত করা কোনো সভ্য দেশে চলতে পারে না। অলি আওলিয়ার দেশে মাজার ভাঙ্গার নামে যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃংলা সৃষ্টি করছে তারা আসলে দেশের শত্রু। ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা। এদের প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের মধ্য দিয়ে দেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু সারা দেশে রাতারাতি এক শ্রেণির সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী এবং অসাধুচক্রের আবির্ভাবের কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তৈরি হচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অর্জিত বিজয়কে অক্ষুন্ন রাখতে সামাজিকভাবে প্রতিটি গ্রাম মহল্লায় দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে জণগণকে ছাত্র জনতার বিজয় নস্যাৎকারী দুষ্কৃতকারীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে স্পষ্ট ভাবে স্মরণ রাখতে হবে যে, বহু মত ও পথের বাংলাদেশে মন্দির- মসজিদ – গির্জা- প্যাগোডা- থাকবে। মাজার থাকবে- বাউল- ফকিরসহ সমস্ত সংস্কৃতি থাকবে। এই দেশ সব ধর্মের, সব জাতির, সব মানুষের দেশ।
তিনি বলেন, ফ্যাসীবাদী শক্তির পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আরেকটি ফ্যাসীবাদী শক্তির হাতে তুলে দেয়ার উদ্দেশ্যে দেশের আপামর জনসাধারণ ৫ আগস্ট রাজপথে নামেনি। তিনি অতি দ্রæত মাজার ধ্বংসকারি হিংস্র উগ্রবাদি ও জঙ্গিদের দমন করতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, তা না হলে ৫ আগস্টের সকল অর্জন ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা মুখে বললে হবে না। বাস্তবেও তা প্রমাণ করতে হবে এবং যে কোনো গোত্রের ধর্মীয় মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে।
কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের আহ্বায়ক এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মহসীন ভুইয়া, মো. সুমন মিয়া, শ্রমিক নেতা আবদুর রহমান, আবদুল হালিম, কৃষক নেতা তাইজুদ্দিন ফকির, আব্বাস আলম প্রমুখ।