নিজস্ব প্রতিবেদক ।
দেশের বৃহৎ দৈনিক ১৭ শ’ মে.টন ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় ট্রাকে সার লোডিংয়ে লেবার বকশিসের নামে ট্রাকপ্রতি ড্রাইভারদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা ডিলার প্রতিনিধির কাছ থেকে ৩৫০ টাকা ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী অফিস থেকে ৫০ টাকা মোট ৬৫০ টাকা হারে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল। লেবারদের অভিযোগ ছিল- চাঁদাবাজির টাকার ভাগ লেবাররা পেতো না। কারাখানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত লোডিং ঠিকাদার লেবারদের এক রকম জিম্মি করে ১০ টাকা প্রতিটন দরে কাজ চালিয়ে আসছিল। এরই প্রতিবাদে লেবাররা চাঁদামুক্ত লোডিং কাজ করতে ও শ্রমের সঠিক মূল্য পেতে ট্রাকে সার লোডিংয়ের কাজ বন্ধ রাখে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গতকাল বুধবার সকালে লোডিং পয়েন্টে কারখানার এমডি, প্রশাসন ও বাণিজ্যিক জিএম, কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত লোডিং ঠিকাদার প্রতিনিধি ও সাধারণ লেবারদের সমন্বয়ে আলোচন্বান্তে সিদ্ধান্ত হয় যে, লোডিং পয়েন্টে ডিলার প্রতিনিধি ও ট্রাক ড্রাইভারদের কাছ থেকে লেবার বকশিসের নামে আর কোন চাঁদা উত্তোলন হবে না। লোডিং ঠিকাদার লেবারদের ট্রাক প্রতি ৪৫০ টাকা হারে শ্রমের মূল্য পরিশোধ করবে। পরবর্তীতে মূল্য আরো বৃদ্ধি করা হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে লেবাররা ট্রাকে সার লোড করে দেন। জটিলতা শেষে অবশেষ শুরু হয় সার ডেলিভারি।
অপরদিকে কারখানার আনলোড পয়েন্টেও লেবার বকশিসের নামে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল। সাম্প্রতিক আনলোড পয়েন্টে চাঁদাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়ায় বিএনপি নেতা সাইদুর ইসলাম তোতার লোকজনের ওপর অপর একদল বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা করে। এ নিয়েও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে আনলোড কাজের ঠিকাদার আনোয়ারুল ইসলাম বাবুল ও সাব ঠিকাদার সাইদুর ইসলাম তোতা কারখানায় কর্মরত সকল লেবারদের অফিসে ডেকে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে আলোচনা করে ১৫ টন সার আনলোড বাবদ লেবাররা ১১শ’১০ টাকা পাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে শ্রমিকেরা মহাখুশি। লেবার সরদার মনিরুজ্জামান মনি জানান, ১৯৯১ সাল থেকে আমরা এ কারখানায় কুলি শ্রমিকের কাজ করে আসছি। বহু ঠিকাদার এলো আর গেলো। সবাই আমাদের ওপর বন্দুক রেখে গুলি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ওরা কোটিপ্রতি হয়ে গেছে। অথচ আমরা গরীব চিরকাল গরীবই থেকে গেলাম। এত বছরে কোন ঠিকাদার আমাদের ডেকে নিয়ে কোন দিন কোন কথা বলেনি। ওরা শুধু আমাদের শোষণই করেছে। অথচ নতুন আনলোড ঠিকাদার তোতা ভাই আমাদের অফিসে ডেকে নিয়ে চেয়ারে বসবার দিয়ে আমাদের কষ্টের কথা শুনে কারখানার ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর দিয়ে আনলোডি কাজ করছেন। আমরা লেবাররা তোতা ভাইয়ের প্রতি অনেক খুশি।
এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার উপ-ব্যাবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ও বিভাগীয় প্রধান (বাণিজ্যিক) আব্দুল হামীন জানান, লেবারদের লোডিং কাজে জটিলতা নিরসন করে বুধবার দুপুর থেকে কারখানা থেকে সার ডেলিভারি শুরু হয়েছে।